বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৪:১৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ডেল্টার চেয়েও ভয়ঙ্কর করোনার নতুন ধরন

ডেল্টার চেয়েও ভয়ঙ্কর করোনার নতুন ধরন

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনা ভাইরাসের আরও একটি নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। বি.১.১৫২৯ নামে এই ধরনটির উৎপত্তি দক্ষিণ আফ্রিকায়। গ্রিক অক্ষর ‘নিউ’-এর মাধ্যমে এর নামকরণ করা হচ্ছে। আফ্রিকায় করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ), ব্রিটেন ও ভারত কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা করেছে। এটি করোনার আগের যে কোনো ধরনের তুলনায় অধিক সংক্রমণশীল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি যেখানে ডেল্টা ধরনের ক্ষেত্রে টিকার কার্যকারিতা ছিল ৪০ শতাংশ, সেখানে নতুন ধরনের ক্ষেত্রে তা মাত্র ২৫ শতাংশ। ধারণার চেয়েও এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। এদিকে করোনার নতুন ভয়ঙ্কর ধরনটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জরুরি বৈঠকে বসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সভা আহ্বান করেছে।

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ডব্লিউএইচওর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আমাদের দেশে এ সংক্রান্ত চিঠি চালাচালি শুরু হয়েছে। আজ শনিবার একটি জরুরি সভা অনুুষ্ঠিত হতে পারে। এ ছাড়া কোভিড-১৯ সংক্রান্ত যতগুলো কমিটি রয়েছে, তাদের মধ্যেও আন্তঃযোগাযোগ শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতে উৎপত্তি হওয়া করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ধরন নিয়েই চলতি বছর ত্রাহি ত্রাহি দশা হয়েছিল বিভিন্ন দেশের। সংক্রমণ ও মৃত্যুর একের পর এক রেকর্ড গড়ে ডেল্টা হয়ে উঠেছিল বিশ্বত্রাস। বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে তো ডেল্টার সংক্রমণ আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি করে। বর্তমানে ডেল্টার দৌরাত্ম্য একটু কমে এলেও মহামারী শেষ হওয়ার কোনো সুসংবাদ নেই। উল্টো করোনা ভাইরাসের এমন একটি ধরনের খোঁজ মিলেছে, যা ভাইরাসটির অন্য সব ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বহুগুণ ভয়ঙ্কর। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ক্রমাগত জিনবিন্যাস বদলের ফলে সংক্রমণ ক্ষমতা এখন অনেক বেড়েছে করোনা ভাইরাসের কয়েকটি নয়া প্রজাতির। ভবিষ্যতে ভারতীয় উপমহাদেশসহ বিভিন্ন দেশে করোনার আরও সংক্রামক রূপের সন্ধান মেলার আশঙ্কা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) জানান, আমরা সামগ্রিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করছি। একই সঙ্গে ডব্লিউএইচওর গাইডলাইন ফলো করছি। পাশাপাশি কারিগরি কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যারিয়েন্ট যেটাই হোক, আমাদের সব সময়ের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, করোনা এমন ভাইরাস; যার সংক্রমণ থেকে সহসা মুক্তি মিলবে না। দেশের নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে যত দ্রুত সম্ভব টিকার আওতায় আনতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাফেরার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সেটি অবিলম্বে পরিহার করতে হবে। নিজে সুস্থ থাকতে এবং পরিবারকে সুস্থ রাখতে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, দূরত্ব মানতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রোগতত্ত্ববিদ এবং আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে আগাম ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিশেষ করে সাউথ আফ্রিকা থেকে যারাই আসবেন সরকারি ব্যবস্থাপনায় তাদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন করতে হবে। যারা বাংলাদেশি নন, তাদের আসতে নিরুৎসাহিত করতে হবে। সম্প্রতি যাদের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, তাদের জিনম সিকুয়েন্স করতে হবে। তা হলে বোঝা যাবে এই ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যে আমাদের দেশে এসেছে কিনা। যদি নতুন ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তা হলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সব ধরনের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করতে হবে। তিনি বলেন, করোনার এই ‘নিউ’ ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে টিকা মাত্র ২৫ শতাংশ কার্যকর; যেখানে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে ৪০ ভাগ কার্যকর ছিল। এটা যে বিপজ্জনক, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের সীমান্তগুলো নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

বিবিসি, সিএনএন, মেইল অনলাইনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, এরই মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, বৎসোয়ানা এবং হংকংয়ে করোনার বি.১.১৫২৯ ধরনে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলতে শুরু করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভাইরাসটির এই ধরন আসলে ধারণার চেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। এখন শুধু দেশে দেশে এতে আক্রান্তের সন্ধান মেলা বাকি। ভাইরাসটির এই রূপটির আবির্ভাব হয়েছে প্রায় ৫০ বার জিনের বিন্যাস বদলে। এর মধ্যে ৩২ বার বদলেছে স্পাইক প্রোটিনের চরিত্র, যা দেখে ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা ভবিষ্যতে স্পাইক প্রোটিনের বিন্যাস বদলের আরও রেকর্ড তৈরি হতে পারে। সেই সঙ্গে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে করোনা ভাইরাস।

বিবিসি জানিয়েছে, বি.১.১৫২৯-এর সংক্রমণ ঠেকাতে এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, বৎসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, লেসোথো, এসওয়াতিনি থেকে সব ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করেছে। একই পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত ও ইসরায়েল। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের সংক্রামক রোগবিষয়ক সংস্থা ইম্পেরিয়াল ডিপার্টমেন্ট অব ইনফেকশাস ডিজিজের এক ভাইরোলজিস্ট করোনার এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘ভয়াবহ’ এবং এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে খারাপ ধরন বলে বর্ণনা করেছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক টুলিও ডি অলিভিয়েরা বলেছেন, এই ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশনের ধারা অস্বাভাবিক এবং অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট থেকে এটি অনেক ভিন্ন। এই ভ্যারিয়েন্ট আমাদের অবাক করেছে। বিবর্তনের হিসাবে এবং পরবর্তী মিউটেশনের হিসাব করলে এটি কয়েক ধাপ লাফ দিয়েছে। করোনার সব মিলিয়ে ৫০টি মিউটেশন রয়েছে, যার মধ্যে ৩০টি মিউটেশনই স্পাইক প্রোটিনে। অধিকাংশ টিকাই স্পাইক প্রোটিনের এই ভ্যারিয়েন্টগুলোকে আক্রমণ করে। ভাইরাসের যে অংশটি রিসিপটর বাইন্ডিং ডোমেইন বা আমাদের শরীরের কোষের সঙ্গে প্রথম সংযোগ ঘটায়, নতুন ভ্যারিয়েন্টে সেটির ১০টি মিউটেশন রয়েছে। ভয়াবহ ক্ষতিকর হিসাবে আলোড়ন তৈরি করা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে এই মিউটেশন ছিল মাত্র দুটি। যদিও অনেক মিউটেশন থাকা মানেই যে তা ক্ষতিকর, তেমন নয়; কিন্তু মিউটেশনগুলো আসলে কী ক্ষতি করছে, তা জানা জরুরি। চিন্তার বিষয় হলো চীনের উহানে উদ্ভূত ধরনের চেয়ে এটি অনেক ভিন্ন। এর অর্থ করোনা সংক্রমণ রোধে তৈরি হওয়া টিকা, যেগুলো মূল ধরন ব্যবহার করে বানানো হয়েছিল নতুন ধরনের জন্য তা সমানভাবে কার্যকর না-ও হতে পারে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877